বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৫ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেক্স:‘রিয়ার পরিবার আমাকে পাগলা গারদে পাঠিয়ে দেবে বাবা’, মৃত্যুর এক মাস আগে ঠিক এই কথাগুলোই নাকি সুশান্ত তার বাবাকে বলেছিলেন ফোনে। এছাড়াও, অন্তত ১৫ কোটি রুপি সুশান্তের একাউন্ট থেকে সরিয়েছিলেন রিয়া।
মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) বিহারের পাটনার রাজীব নগর থানায় দায়ের করা এফআইআর-এ এমন বিস্ফোরক দাবিই করেছেন সুশান্তের বাবা কৃষ্ণকুমার সিং। শুধু তাই নয়, উত্থাপন করেছেন আরও বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর বিষয়, যা তদন্তের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
সংবাদসংস্থা এএনআই-এর খবর অনুযায়ী, ইতোমধ্যেই প্রাথমিকস্তরে তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। কৃষ্ণকুমার সিং যাদের নাম উল্লেখ করেছেন এফআইআর-এ, প্রত্যেকের উপরেই নজর রাখছে পুলিশ। জেরাও করা হবে বলে জানিয়েছেন পাটনার পুলিশ কর্মকর্তা বিনয় তিওয়ারি।
রিয়া চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলেছেন সুশান্তের বাবা। মার্চ মাসেই কেন সুশান্ত সিং রাজপুতের বিশ্বস্ত এক দেহরক্ষীকে সরিয়ে দিয়েছিলেন বান্ধবী রিয়া? যদি সত্যিই মানসিক সমস্যায় ভুগে থাকে ছেলে, তাহলে কেন চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ নেওয়ার আগে পরিবারকে জানাতে দেননি তিনি? কেনই বা আত্মীয়-স্বজন, ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধবদের থেকে সুশান্তকে সরিয়ে রাখতেন? এমন একাধিক প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন কৃষ্ণ কুমার সিং তার দায়ের করা অভিযোগে। শুধু তাই নয়, খুব কড়া ডোজের ওষুধ খাইয়ে দিয়ে একবার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা সুশান্তের বন্ধুদের বলেছিলেন ‘ওর ডেঙ্গু হয়েছে’, এমন অভিযোগও রয়েছে রিয়ার বিরুদ্ধে।
উল্লেখ্য, রিয়া চক্রবর্তী সুশান্ত সিং রাজপুতের তিনটি কোম্পানিরই অংশীদার ছিলেন। শুধু তাই নয়, এর মধ্যে একটি কোম্পানির অংশীদার রয়েছেন রিয়ার ভাইও। যদিও অভিনেত্রীর কোনও মূলধনই ছিল না এই তিনটি সংস্থাতে। পুরো টাকাই ঢেলেছিলেন সুশান্ত। মামলায় সেই প্রসঙ্গও টেনেছেন কৃষ্ণ কুমার সিং।
সুশান্তের বাবার অভিযোগ, রিয়ার প্রথম থেকেই নজর ছিল তার ছেলের অর্থ এবং সম্পত্তির দিকে। সুশান্তের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে শপিং আর বিদেশ ভ্রমণই নয়, জোর করে খুলিয়েছিলেন তিনটি কোম্পানি। সুশান্তের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে সম্প্রতি একটি এমন অ্যাকাউন্টে ১৫ কোটি টাকা ট্রান্সফার হয়েছে, যার সঙ্গে সুশান্তের কোনও লেনদেনই নেই। সুশান্তের ব্যাংক ডিটেইলস সবটাই জানতেন রিয়া। তিনি সুশান্তের টাকা আত্মসাৎ করে, নয়ছয় করেছেন বলে অভিযোগ প্রয়াত অভিনেতার বাবার।
এখানেই শেষ নয়, সোমবার পাটনার রাজীব নগর থানায় রিয়ার বিরুদ্ধে ৭ পাতার ওই অভিযোগনামায় এও উল্লেখ রয়েছে যে, সুশান্তকে জোর করে মানসিক রোগী প্রমাণিত করার চেষ্টা করছিল রিয়া ও তার পরিবার। জোর করে মানসিক অবসাদের ওষুধ খাওয়ানো হত তাকে। এমনকি, সুশান্তের আগের বাড়িতে ভূত-প্রেত রয়েছে, এসব বলে জোর করে বান্দ্রার এই বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে শিফট করান রিয়া। যা প্রথমে সুশান্তের বাড়ির লোকও জানতেন না। এছাড়াও সুশান্তকে নিয়ে শহরতলীর এক রিসোর্টেও কিছুদিন থাকেন রিয়া। সুশান্ত অদ্ভূত আচরণ করে কিংবা আজগুবি কথা বলে, এসব বারবার বলে তার মানসিক পরিস্থিতি নষ্ট করে দিয়েছিলেন রিয়া। সুশান্তের এক বিশ্বস্ত দেহরক্ষীকে সরিয়ে দেওয়ার পর সমস্যা করেন সুশান্তের কর্মচারীদের সঙ্গেও। পুরনো কাউকেই পছন্দ করতেন না রিয়া। বরং, সবটাই নিজের অঙ্গুলিহেলনে চালনা করতেন। সুশান্ত কার সঙ্গে খাবে, উঠবে, বসবে, কথা বলবে যাবতীয় বিষয় নিজের নখদর্পণে রেখেছিলেন রিয়া। এমনকী সুশান্তের আত্মহত্যার এক সপ্তাহ আগে যখন রিয়া বাড়ি ছেড়ে চলে যান, তখন বহুমূল্য গয়না, টাকাপয়সা, ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড থেকে শুরু করে চিকিৎসার ফাইলগুলো পর্যন্ত নিজের সঙ্গে নিয়ে যান রিয়া। যাতে সুশান্তকে ব্ল্যাকমেইল করতে পারেন ওই ফাইলগুলো দিয়ে..” এমনই অজস্র অভিযোগ তুলেছেন সুশান্তের বাবা।
রাজীব নগর থানায় রিয়ার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৪১, ৩৪২, ৩৮০, ৪০৬, ৫০৬ এবং ৩০৬ ধারায় দায়ের করা হয়েছে অভিযোগ। রিয়ার বিরুদ্ধে কৃষ্ণকুমার সিংয়ের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে ইতোমধ্যেই পাটনা থেকে পুলিশের ৪ জনের একটি টিম মুম্বাইয়ের উদ্দেশে রওনা হয়েছে ঘটনার তদন্তে। মুম্বাই পুলিশের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগেই তারা তদন্ত করবেন বলে জানা গেছে।
দিন যত যাচ্ছে ক্রমশই জোরালো হচ্ছে সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর রহস্য। রিয়ার পক্ষের আইনজীবীও গতকাল আলোচনা সেরে এসেছেন অভিনেত্রীর পরিবারের সঙ্গে। রিয়ার আগাম জামিনের প্রস্তুতিও চলছে বলে জানা যায়।
মঙ্গলবারই সুশান্তের বান্ধবী তথা অভিনেত্রী রিয়া চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছেন সুশান্তের বাবা কৃষ্ণকুমার সিং। এযাবৎকাল সুশান্তের মৃত্যু নিয়ে কোনওরকম মুখ খোলেননি তার পরিবারের কেউ। বরং বিতর্ক, এবং মৃত্যুর কারণ নিয়ে জলঘোলা হলেও চুপ থেকেছে সিং পরিবার। সুশান্তের মৃত্যুর পর পরিবারের পক্ষ থেকে এই প্রথম কোনও অভিযোগ দায়ের করা হলো।